কলকাতা শহরের জনপ্রিয় জাদুঘর

আজকে আমার প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়বস্তু হল কলকাতা শহরের কয়েকটি জনপ্রিয় জাদুঘর। এই জায়গাগুলি অনেকেরই শৈশবের মধুর স্মৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। কলকাতা শহরে অবস্থিত সেরা পাঁচটি জনপ্রিয় জাদুঘর সম্বন্ধে বিশেষ কিছু তথ্য নিয়ে আমার লেখা শুরু করার আগে জাদুঘর বলতে কি বোঝায় সেই সম্বন্ধে দু'চার কথা বলে নেব।

জাদুঘর

‘জাদুঘর' একটি বাংলা শব্দ, যার ইংরাজি প্রতিশব্দ হল ‘মিউজিয়াম'। ‘মিউজিয়াম' শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে প্রাচীন গ্রিক শব্দ ‘মউসিয়ান' থেকে। গ্রিক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দিরকে মউসিয়ান বলা হত। প্রাচীন গ্রিসে এই মন্দিরগুলিতে পাঠাগার, প্রাচীন শিল্পসামগ্রী ইত্যাদির সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হত।

ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়ামের মতানুসারে জাদুঘর হল “একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান, যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে।”

ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম

১৮১৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গলের প্রাঙ্গণে পথ চলা শুরু করে এই জাদুঘরটি। পরবর্তীকালে কলকাতার চৌরঙ্গীতে নতুন একটি ভবন প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং জাদুঘরটিকে ১৮৭৮ সালে এশিয়াটিক সোসাইটির প্রাঙ্গণ থেকে সেই ভবনে স্থানান্তরিত করা হয়।

কলকাতা শহরের এই জনপ্রিয় জাদুঘর শুধুমাত্র ভারতীয় উপমহাদেশেরই নয়, এটি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যেও প্রাচীনতম ও বৃহত্তম বহুমুখী জাদুঘর। 

ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম আর্ট, আর্কিওলজি, অ্যানথ্রপলজি, জুওলজি, জিওলজি এবং বোটানি মোট ছ'টি বিভাগের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বস্তুর সংগ্রহশালা।

এই মিউজিয়ামের আর্ট গ্যালারিতে ভারত সহ নেপাল, তিব্বত, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা এবং ইরানের চিত্রকলা, বস্ত্রশিল্প ও অলংকরণ সামগ্রীর বিপুল সংগ্রহ রয়েছে।

আর্কিওলজি বিভাগের গ্যালারিতে প্রাক ও আদি ঐতিহাসিক যুগের প্রাচীন নিদর্শন থেকে শুরু করে মৌর্য, শুঙ্গ, সাতবাহন, গান্ধার, কুষাণ, গুপ্ত, পাল, সেন, চন্ডেল, হোয়েসলা, চোল ও অন্যান্য বহু প্রাচীন যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সংগ্রহ রয়েছে। এই আর্কিওলজিক্যাল বিভাগের একটি গ্যালারিতে বহু প্রাচীন মিশরীয় নিদর্শন সংরক্ষিত আছে, যার মধ্যে দর্শনার্থীদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল একটি মমি। ভারতের প্রাচীন, মধ্যযুগীয় ও আধুনিক যুগের মুদ্রার সংগ্রহ একটি গ্যালারিতে প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে। এছাড়াও সংস্কৃত, প্রাকৃত, ফার্সি, আরবি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় পাণ্ডুলিপি, শিলালিপি ও সিলমোহর রয়েছে এই বিভাগের আরও একটি গ্যালারিতে।  অ্যানথ্রপলজি গ্যালারিতে প্রত্ন- নৃতত্ত্ব ও সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্বের বহু প্রাচীন নিদর্শনের সংগ্রহ রয়েছে। জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া পরিচালিত জুওলজিক্যাল বিভাগের গ্যালারিগুলিতে ৩১৪টি প্রদর্শনী রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো। এরমধ্যে বিভিন্ন প্রাণীর কঙ্কাল, মাথার খুলি, শিং ইত্যাদি সংগ্রহ করে রাখা আছে। এই বিভাগের একটি গ্যালারিতে ভারত তথা সমগ্র বিশ্বের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে।

জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া পরিচালিত জিওলজিক্যাল বিভাগের সংগ্রহ মোট পাঁচটি ভাগে বিভক্ত, যথা- ভূপৃষ্ঠ ও উল্কাপিণ্ড, প্রস্তর ও খনিজ, সিওয়ালিক জীবাশ্ম, অমেরুদণ্ডী এবং মেরুদণ্ডী প্রাণীর জীবাশ্ম।

বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া পরিচালিত বোটানিক্যাল বিভাগের বিভিন্ন গ্যালারিতে ভেষজ গাছগাছড়া থেকে শুরু করে রঞ্জক উদ্ভিদ, রজন, উদ্ভিজ্জ তন্তু, তেল, তৈলবীজ ইত্যাদির সংগ্রহ রয়েছে।

ঠিকানা: ২৭, জওহরলাল নেহেরু রোড, ফায়ার ব্রিগেড হেড কোয়ার্টার, নিউ মার্কেট এরিয়া, এসপ্ল্যানেড, তালতলা, কলকাতা- ৭০০০ ১৬

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল মিউজিয়াম

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য আমাদের চিরকালই আকর্ষণ করে। ১৯০৬ সালে ইংল্যান্ডের রাণী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতি রক্ষার্থে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং ১৯২১ সালে এই জাদুঘরটির উদ্বোধন করা হয়।

এই জনপ্রিয় জাদুঘর রাণী ভিক্টোরিয়া এবং তার স্বামী প্রিন্স অ্যালবার্টের স্মৃতি বিজড়িত অসংখ্য বস্তু সংরক্ষণ করে রেখেছে।

রয়েল গ্যালারিতে রাণী ভিক্টোরিয়ার মার্বেল পাথর দ্বারা নির্মিত তরুণ বয়সের একটি অসাধারণ ভাস্কর্য রয়েছে।

এই মিউজিয়ামে সংরক্ষিত লর্ড হেস্টিংস, কর্নওয়ালিস, ক্লাইভ, ওয়েলেসলি ও ডালহৌসির মূর্তি ভারতের ঔপনিবেশিক শাসনের সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।

এছাড়াও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বিশাল উদ্যান জুড়ে রয়েছে ব্রিটিশ শাসনামলের বিভিন্ন ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেলদের মূর্তি। প্রথম বাঙালি শিল্পপতি স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের একটি মূর্তি রয়েছে এই উদ্যানেরই পূর্ব প্রান্তে। এছাড়াও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের উত্তর দিকের প্রবেশদ্বারের সম্মুখে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত রাণী ভিক্টোরিয়ার ব্রোঞ্জ নির্মিত একটি অপূর্ব ভাস্কর্য রয়েছে।

১৯৪৭ সালের পরবর্তী সময়ে জাতীয় নেতাদের অয়েল পেইন্টিং থেকে শুরু করে ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন মূল্যবান স্মারক এই জাদুঘরের একটি গ্যালারিতে সংগ্রহ করে রাখা হয়।

প্রাচীন কলকাতার স্মৃতি বিজড়িত কিছু অয়েল পেইন্টিং ও অন্যান্য বহু মূল্যবান সামগ্রী এই জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও দেশি ও বিদেশি বহু প্রতিভাবান স্বনামধন্য শিল্পীর তৈরি বিভিন্ন ধরণের চিত্রকর্মের সংগ্রহ রয়েছে এই জাদুঘরে।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে রয়েছে একটি গ্রন্থাগার, যেখানে অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর বেশ কিছু দুর্লভ বই সংরক্ষণ করে রাখা আছে।

ঠিকানা: ১, কুইন্স ওয়ে, ময়দান, কলকাতা- ৭০০০ ৭১

রবীন্দ্র ভারতী মিউজিয়াম

বাংলার শিল্প ও সাহিত্যের ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বল করছে স্বর্ণাক্ষরে লেখা যে নাম, যে নাম বাঙালির গর্ব, সেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক বাড়ি হল জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। এই বাড়িতে তিনি শুধু জন্মগ্রহণই করেননি, তাঁর জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কেটেছে এই জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে এবং এই বাড়িতেই তিনি তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। বেঙ্গল স্কুল অফ আর্টের প্রতিষ্ঠাতা ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র গগনেন্দ্রনাথ এবং অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাসভবনও ছিল এই বাড়ি।

১৯৫৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মারক হিসাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা করেন এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় ১৯৬১ সালের ৮ই মে কবির জন্মশতবর্ষে।

রবীন্দ্র ভারতী আইনের অধীনে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে মূলত সংগীত, নৃত্য ও নাটকের শাখায় শিক্ষা ও সংস্কৃতির অগ্রগতির জন্য রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরের বছর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে এই জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে কলকাতার আরও একটি জনপ্রিয় জাদুঘর ‘রবীন্দ্র ভারতী মিউজিয়াম'-এর প্রতিষ্ঠা হয়।

এই মিউজিয়ামে দুটি আর্ট গ্যালারি রয়েছে যেখানে বেঙ্গল স্কুল অফ আর্টের কিছু ছবি ও প্রধানত অ্যাংলো ইন্ডিয়ান স্কুল দ্বারা চিত্রিত ঠাকুর বাড়ির বেশ কিছু ছবি রয়েছে। এই আর্ট গ্যালারিগুলি ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের স্মৃতি বিজড়িত বহু মূল্যবান জিনিসের সংগ্রহ রয়েছে আরও একটি গ্যালারিতে। এছাড়াও এই মিউজিয়ামটিতে জাপান গ্যালারি, চায়না গ্যালারি, ইউএস গ্যালারি এবং হাঙ্গেরি গ্যালারি রয়েছে। এখানে এই দেশগুলিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সফর এবং এই দেশগুলির সাথে তাঁর সম্পর্কের বহু অমূল্য জিনিসের সংগ্রহ রয়েছে।

এছাড়াও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন কার্যকলাপের সংগ্রহের জন্য এই মিউজিয়ামটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

ঠিকানা: ২৬৭, রবীন্দ্র সরণি, সিংহী বাগান, জোড়াসাঁকো, কলকাতা ৭০০০ ০৭

মাদারস ওয়াক্স মিউজিয়াম

কলকাতা শহরের নিউটাউনে এই জনপ্রিয় জাদুঘর লন্ডনের মাদাম তুসো মিউজিয়াম দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১৪ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল। কলকাতার বিখ্যাত ইকোপার্কের প্রধান প্রবেশদ্বারের বিপরীতে মাদারস ওয়াক্স মিউজিয়ামটি অবস্থিত।

ক্রীড়া, বলিউড, হলিউড, ইতিহাস এবং সংগীত জগতের খ্যাতনামা ব্যক্তিদের মোমের তৈরি অসাধারণ সব মূর্তি এই জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে।

এছাড়াও বিভিন্ন কার্টুন চরিত্র থেকে শুরু করে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর মতো বহু স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বদের মোমের মূর্তি রয়েছে এই জাদুঘরটিতে।

ঠিকানা: ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স সেন্টার, বিশ্ব বাংলা সরণি, এএ-II, সিবিডি-I, নিউটাউন, কলকাতা- ৭০০ ১৫৬

স্মরণিকা ট্রাম মিউজিয়াম

ট্রামের সাথে জড়িয়ে আছে কলকাতা শহরের আবেগ, ভালোবাসা ও ঐতিহ্য। বিগত দেড়শ বছর ধরে কলকাতার রাস্তায় এই যানটি মানুষকে পরিষেবা দিয়ে চলেছে। এই ঐতিহ্যবাহী যানের সমস্ত খুঁটিনাটি সংরক্ষিত আছে স্মরণিকা ট্রাম মিউজিয়ামে।

২০১৪ সালে এই মিউজিয়ামটির উদ্বোধন করা হয়। আর পাঁচটি মিউজিয়ামের মতো এই  মিউজিয়ামটির কাঠামো ইঁট কাঠ পাথরের সাধারণ কাঠামোর মতো নয়। এই মিউজিয়ামটি একটি ভিনটেজ ট্রামের অভ্যন্তরে তৈরি করা হয়েছে, যে ট্রামটি ১৯৩৮ সালে নির্মিত এবং এখনও কার্যকর রয়েছে।

এছাড়াও এই মিউজিয়ামে প্রবেশের টিকিটগুলিও ট্রামের টিকিটের অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে এবং টিকিট প্রদানকারী ব্যক্তিটিও ট্রাম কন্ডাক্টরের ন্যায় পোশাক পরে থাকেন।

এই মিউজিয়ামটিতে ঘোড়ায় টানা ট্রাম থেকে শুরু করে জীবাণুনাশক ট্রাম, অমনিবাস, ফ্ল্যাট ওয়াগন ট্রাম, ওয়াটারিং ট্রাম ইত্যাদি সমস্ত ধরনের ট্রামের ফটোগ্রাফ ও আর্টিকেল রয়েছে।

এছাড়াও এখানে আপনি দেখতে পাবেন পুরনো কলকাতার বিরল কিছু ছবি, পুরনো ট্রাম পাস ও ট্রামের টিকিট, ট্রামগুলি প্রথম চলার সময় ব্যবহৃত মুদ্রা, কয়েন এক্সচেঞ্জার মেশিন ইত্যাদি বহু প্রাচীন নিদর্শন।

কলকাতার এই ট্রাম মিউজিয়ামটিতে শুধুমাত্র কলকাতা বা ভারতের ট্রাম সম্পর্কিতই নয়, সমগ্র বিশ্বের ট্রামের ইতিহাস সম্পর্কেও বহু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

ঠিকানা: ৬, এসপ্ল্যানেড ইস্ট, ময়দান, বো ব্যারাকস, কলকাতা- ৭০০০ ৬৯

Author

Moumita Sadhukhan

A big foodie and a fun-loving person, love to explore the beauty of nature and want to introduce Indian cultural heritage to the future generation. 

Please share your valuable comments and feedback

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: